সোমবার ২২ সেপ্টেম্বার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ২০টি রেল ইঞ্জিন দিচ্ছে চীন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ১৫ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০৮:২৪ পি.এম

. .

বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) জন্য ২০টি মিটারগেজ (এমজি) লোকোমোটিভ কেনায় সহায়তা হিসেবে  ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার (প্রায় ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা) অনুদান দিচ্ছে চীন। দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো ইঞ্জিনের কারণে যে সংকট চলছে, তা নিরসনে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন রেল কর্মকর্তারা।

রেল মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ‘চায়না গ্রান্টের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (পিডিপিপি) অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পিডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা (প্রায় ১৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার)। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা দেবে চীন এবং বাকি ৪৪ কোটি টাকা (প্রায় ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার) আসবে সরকারি তহবিল থেকে।

প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা আছে। এ সময়ের মধ্যে ২০টি লোকোমোটিভ সরবরাহ ছাড়াও খুচরা যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি এবং বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও মেকানিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে, যাতে প্রযুক্তি ও জ্ঞানের স্থানান্তর নিশ্চিত হয়।

পুরোনো বহরের সংকট
পিডিপিপি নথি অনুযায়ী, বর্তমানে রেলওয়ের বহরে মোট ৩০৬টি লোকোমোটিভ আছে—এর মধ্যে ১৭৪টি মিটারগেজ ও ১৩২টি ব্রডগেজ। কিন্তু এমজি লোকোমোটিভের অধিকাংশই ২০ বছরের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে।

তথ্য বলছে, মোট ১২৪টি এমজি লোকোমোটিভ, অর্থাৎ বহরের ৭১ শতাংশ নকশাগত আয়ুষ্কাল পার করেছে। এর মধ্যে ৬৮টি ইঞ্জিন চলছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আর ৮৪টি ব্যবহার হচ্ছে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে।

প্রকৌশলীদের মতে, এত পুরোনো ইঞ্জিন সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। পুরোনো নকশার যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না, আমদানিতে খরচ বেড়েছে, ঘন ঘন বিকল হওয়ায় রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং জ্বালানি খরচও বাড়ছে।

এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন পুরোনো ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের খরচ উৎপাদনক্ষমতার তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। নির্ভরযোগ্যতা এতটাই কমে গেছে যে ট্রেন বিলম্ব ও বাতিল প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়ছে।’ তিনি সতর্ক করেন, দ্রুত নতুন লোকোমোটিভ সংগ্রহ না হলে পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন এমজি রুটে চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

লোকোমোটিভ সংকট ও বাড়তি চাহিদা
২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিট-৫২) অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট বিভাগে এমজি রুটে ২০৩টি লোকোমোটিভ দরকার ছিল। কিন্তু বর্তমানে সক্রিয় আছে মাত্র ১৮২টি। অর্থাৎ অন্তত ২১টির ঘাটতি রয়েছে। বাস্তবে এই ঘাটতি আরও বেশি, কারণ ২০২০ সালের পর যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনের চাহিদা বেড়েছে।

অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেনকে, ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালবাহী ও লোকাল ট্রেন। আবার সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে লোকোমোটিভ ওভারহলে পাঠানো যাচ্ছে না, এতে বিকল হওয়ার প্রবণতা আরও বাড়ছে।

পরিকল্পনা ও পূর্বের ব্যর্থতা
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন অংশীদারিত্ব ১০ শতাংশে এবং মালবাহী পরিবহন ১৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যানে প্রথম ধাপে (২০১৭-২০২১) ৭৪টি প্রতিস্থাপনযোগ্য ও ৩৭টি নতুন লোকোমোটিভ কেনার সুপারিশ ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৩০টি।

২০১১ সালে ৭০টি এমজি লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা অর্থসংকটে বাতিল হয়ে যাওয়ায় রেলওয়েকে পুরোনো বহরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

নতুন লোকোমোটিভের সম্ভাবনা
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ২০টি চীনা লোকোমোটিভ এলে যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে নতুন সেবা চালু করা সম্ভব হবে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও জ্বালানি ব্যয় কমবে, আধুনিক ইঞ্জিন নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চলাচল নিশ্চিত করবে এবং আয়ও বাড়াবে।

এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লোকোমোটিভের সংকটের কারণে রেলওয়েকে সেবা সীমিত করতে হচ্ছে এবং মেরামতের কাজ পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। চীনের এই অনুদান কিছুটা স্বস্তি দেবে, তবে মোট চাহিদা এখনো অনেক বেশি।’

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প ইতিবাচক হলেও দীর্ঘমেয়াদে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ উভয় ধরনের লোকোমোটিভে আরও বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। বহরের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এমজি ইঞ্জিন আয়ুষ্কাল পার করেছে। সময়মতো প্রতিস্থাপন না হলে শুধু কার্যকারিতা নয়, মূল রুটগুলোর সেবা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নতুন লোকোমোটিভ ছাড়া রেলওয়ে নির্ভরযোগ্য পরিবহন খাত হিসেবে যাত্রী ও মালবাহী উভয় বাজারেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে।

.

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

মৌসুমের শেষ দিকে বরিশালে ইলিশের দাম বাড়ল আরেক দফা

news image

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কেউ ভোট দিতে পারবেন না

news image

ভালো থাকুক বাংলাদেশ, বললেন ব্যারিস্টার সুমন

news image

এবার অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার আরও দুটি লকারের সন্ধান

news image

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৯ বিলিয়ন ডলার

news image

বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ২০টি রেল ইঞ্জিন দিচ্ছে চীন

news image

ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কমিশনের ৭০ ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব: আসিফ নজরুল

news image

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল বন্ধে কঠোর সরকার

news image

দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা বন্দীদের সাজা কমানোর পরিকল্পনা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতু, জিএস শিবির সমর্থিত মাজহার

news image

প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে পারবেন না ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা

news image

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ৫২ দিন পর বাড়ি ফিরল হাফসা ও রাইয়ান

news image

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আরও ২৪৫ রোগী

news image

দলবাজ শিক্ষকদের কারণে জাকসু নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা

news image

চোখের সামনেই শত শত কোটি ডলার চুরি

news image

শেখ হাসিনার আমলে অর্থপাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ ব্রিটিশ গণমাধ্যমের

news image

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ৩ জন কারাগারে

news image

ইসরাইলের ঔদ্ধত্যে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তারেক রহমান

news image

জামায়াতে ইসলামী 'একটি চিতাবাঘ, যার দাগ বদলায় না'

news image

বিকেলে ঘোষণা করা হতে পারে জাকসুর ফল: নির্বাচন কমিশন

news image

রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকলেও ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

news image

ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৮৬

news image

জাকসুর ভোট বর্জন ৪ প্যানেলের, পুনর্নির্বাচনের দাবি

news image

অনিয়মের অভিযোগ তুলে জাকসু নির্বাচন বর্জন করলো ছাত্রদল

news image

কারচুপির অভিযোগ, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল ১ ঘণ্টা

news image

মহেশখালীতে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এএসআইসহ আহত ৩

news image

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচের পরও ডুবছে চট্টগ্রাম

news image

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরেক শিশুর মৃত্যু

news image

প্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

news image

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা